খুলনা, বাংলাদেশ | ১ মাঘ, ১৪৩১ | ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  দুদক সংস্কারে ৪৭ প্রস্তাবনা কমিশনের; কাল দেয়া হবে প্রধান উপদেষ্টা কে
  ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এখন কোনো উত্তেজনা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় খালাস পেলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর
  নির্বাচন যত বিলম্ব হচ্ছে তত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হচ্ছে, ভ্যাট বৃদ্ধি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে : মির্জা ফখরুল
খুলনায় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান

‘সুস্থ প্রতিযোগিতা না থাকলে গণমাধ্যমের স্বাভাবিক বিকাশ হবেনা’

গেজেট ডেস্ক

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেছেন ‘গণমাধ্যমগুলো যাতে যথাযথভাবে তার ভূমিকা পালনে সক্ষম হয় তার উপযোগী নীতিমালা প্রণয়নে কমিশন সুপারিশ করবে। আইন-কানুন ও নিয়ম-নীতি সঠিকভাবে অনুসরণ করে সাংবাদিকতার প্রতিযোগিতায় যারা টিকে থাকবে তারাই গ্রহণযোগ্য হবে। সুস্থ প্রতিযোগিতা না থাকলে গণমাধ্যমের স্বাভাবিক বিকাশ হবেনা।’

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

কামাল আহমেদ বলেন, মফস্বলে যখন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে রিপোর্টার হিসেবে তখন আপনাকে শুধু সাংবাদিক নিয়োগ দেওয়া হয়? আপনাকে বিজ্ঞাপন সংগ্রাহক হিসেবেও দায়িত্ব দেওয়া হয়। একইসঙ্গে সার্কুলেশনেরও দায়িত্ব দেওয়া হয়। একইসঙ্গে সাংবাদিক, বিজ্ঞাপন সংগ্রাহক এবং সার্কুলেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু কোনোটার জন্য আপনাকে বেতন দিচ্ছে না। একটি কার্ড দিলেই হয়। এ রকম অন্যায় হচ্ছে এবং ব্যাপকভাবেই হচ্ছে।

তিনি বলেন, হাতে গোনা কয়েকটি টেলিভিশন-কাগজ, তারা নিয়মিত বেতন দেন। কিন্তু সেই বেতনভাতায় হয়তো বৈষম্য আছে। ওয়েজবোর্ডের যে সুযোগ-সুবিধা ঢাকার বাহিরের সাংবাদিকরা কার্যত পান না। একেবারে কেউ পান না তা বলবো না। যারা পান তারা খুব ব্যতিক্রম ও সৌভাগ্যবান। ওয়েজ বোর্ডের লাভটা শুধু মালিকরাই পান, তাদের বিজ্ঞাপন রেটটা বাড়িয়ে দিতে পারেন। মাঠের সাংবাদিকরা কখনো সুফল পান না। প্রস্তাব এসেছে, এমন একটা ব্যবস্থা করা দরকার যাতে ন্যূনতম বেতন কাঠামো কার্যকর হয়। সবাই যাতে ন্যূনতম বেতনভাতা পায়। এই প্রস্তাবটা কম গুরুত্বপূর্ণ না। এ প্রস্তাবের নিশ্চয় ভালো দিক আছে।

কামাল আহমেদ আরও বলেন, সারাদেশে সাংবাদিকদের জন্য বেতনের একটা ন্যূনতম হিসাব থাকা দরকার। কারণ সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা যদি না থাকে তাহলে তার স্বাধীনভাবে কাজ করার মানসিকতাও থাকবে না। সাধারণত সে অনেক ক্ষেত্রেই আপস করতে বাধ্য হবে, আপস করবে। ওই যে বিজ্ঞাপন সংগ্রাহকের কাজ করলে যেমন আপস করা হয়। একটা প্রতিষ্ঠান থেকে বিজ্ঞাপন আনলে তার বিরুদ্ধে লেখা সম্ভব হয় না, ভালো কিছু লিখবেন, কিন্তু বিরুদ্ধে না। তাহলে তো বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা হলো না। স্বাধীন এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্যে সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা দরকার। একই সঙ্গে তার প্রতিষ্ঠানেরও আর্থিক সচ্ছলতা দরকার। তার প্রতিষ্ঠানকেও টেকসই করতে হবে। সেই প্রতিষ্ঠানকে টেকসই করার জন্যে সেই প্রতিষ্ঠান যাতে অন্যায়ের শিকার না হয়, অবিচারের শিকার না হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

এসময় তিনি বলেন, দেশে ব্যক্তি-ব্যবসায়িক স্বার্থে বা রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর জন্য সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহারের প্রবণতা প্রবল। দেশের গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ন্যূনতম একটি বেতনের নিশ্চয়তা থাকা দরকার। সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা যদি না থাকে, তাহলে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার মানসিকতা থাকবে না। ওয়েজবোর্ডের যে সুযোগ-সুবিধা তা ঢাকার বাইরের সাংবাদিকরা কার্যত প্রায় পান না। যারা পান তারা সৌভাগ্যবান।

কামাল আহমেদ বলেন, সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে আইন ও নীতিমালায় সম্পাদকের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার বিষয়গুলোসহ অনেক ইতিবাচক বিষয়বস্তু রয়েছে। তবে যারা অতীতে সরকার পরিচালনা করেছেন তারা নিজেরাই নীতিমালা অনুসরণ করেননি। যে কারণে এই সমস্যাগুলো হয়েছে। তারা তোষনকারীদের খুশি করার জন্য অনেক ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে পত্রিকার সার্কুলেশনের সংখ্যা বিষয়ক ডিএফপির মিডিয়া তালিকা তৈরিতে প্রভাব বিস্তার করা হয়েছে। গণমাধ্যমের মালিক, সম্পাদক, গণমাধ্যমকর্মী আমরা সবাই দুর্নীতি ও নিয়মভাঙ্গার অন্যায়ের অংশীদার। সেই কারণেই আজকে এরকম একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। টেলিভিশন-সংবাদপত্র মিডিয়ায় যাকে মফস্বলে রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়, তাকেই আবার বিজ্ঞাপন সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়া হয়।

তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে অন্যায়ভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এর ফলে যারা চাকুরিচ্যুত হয়ে বেকারত্বের শিকার হয়েছিলেন তারা ক্ষতিপূরণের দাবীদার হওয়ার যোগ্য। একইসাথে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা জানান, গণমাধ্যমগুলোয় কর্মরত রাজধানীকেন্দ্রিক সাংবাদিক ও মফস্বল এলাকার সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। সবার জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ দরকার। দলীয় প্রভাব বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গণমাধ্যম অথবা এর কর্মীদের ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করতে হবে।

মতবিনিময় সভায় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য আখতার হোসেন খান, জিমি আমির, টিটু দত্ত গুপ্ত, আব্দুল্লাহ আল মামুন, বেগম কামরুন্নেসা হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময়সভায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলার প্রায় ১৫০জন গণমাধ্যমকর্মী অংশ নেন।

খুলনা গেজেট/ টিএ




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!